বিশ্ব ইজতেমা বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে মালয়েশিয়ায় নেওয়ার হুমকি দিয়েছে মালয়েশিয়া তাবলিগের শূরা কর্তৃপক্ষ। রবিবার বাংলাদেশ তাবলিগ জামাতকে লেখা এক চিঠিতে এ হুমকি দেওয়া হয়।
গাজীপুরের টঙ্গীতে তাবলিগ জামাতের উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদকে ইজতেমার আমির ও ফয়সালের (সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী) পদ থেকে সরানো হলে এ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে এক চিঠিতে সতর্ক করা হয়।
তাবলিগ জামায়াতের কানাডা শুরার সদস্য আবির রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘টঙ্গী ইজতেমায় নিজামউদ্দিন মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদের অংশগ্রহণ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে আমরা জেনেছি। দিল্লির নিজামউদ্দিন মসজিদ থেকে শতবর্ষ আগে তাবলিগ জামাতের এই যাত্রা ও প্রসারের ক্ষেত্রে মাওলানা মোহাম্মদ ইলিয়াস (রহ.)-এর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও দোয়ার কথা বিশ্ববাসী জানে।…জীবিত থাকতে প্রতিবছর এই মারকাজের উত্তরসূরি মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ (রহ.), মাওলানা ইনামুল হাসান (রহ.) মাওলানা জুবায়েরুল হাসান (রহ.) টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। এখন তাদের উত্তরসূরি হিসেবে আসছেন মাওলানা মোহাম্মদ সাদ।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, টঙ্গীর ইজতেমা কেবল লাখো মুসল্লির জমায়েতই নয়, এটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবীণ নীতি-নির্ধারকদের মিলনমেলাও, যারা বিশ্বের আনাচে-কানাচে মানুষের শান্তি ও কল্যাণের স্বার্থে কাজ করেন।
কানাডা শুরার পক্ষ থেকে বলা হয়, পুরো তাবলিগের ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে, টঙ্গীসহ এ ধরনের ইজতেমার দায়িত্বভার নিজামউদ্দিন মারকাজের উত্তরসূরিদের ওপরই থাকছে, যেটা ক’বছর ধরে অত্যন্ত সুচারুভাবে পালন করে আসছেন মাওলানা মোহাম্মদ সাদ।
‘তারই ধারাবাহিকতায় কিছু লোক তার বিরোধিতা করলেও সারাবিশ্বের মুসলিম উম্মাহর মতো কানাডার শুরাও কেবল নিজামউদ্দিন মারকাজের উত্তরসূরি হিসেবে মাওলানা সাদকে আমির ও ফয়সাল হিসেবে গ্রহণ করবে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ শুরা যদি অতীতের রেওয়াজ ভেঙে নিজামউদ্দিন মারকাজের উত্তরসূরিকে দায়িত্বভার থেকে সরিয়ে দেয়, তাহলে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হতে পারে, আর সেটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই। এমন কিছু হলে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা চিরতরে বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ২০১৮ সালকে বিশ্ববাসী মনে রাখবে।’
একই দিন শুরা মালয়েশিয়ার চিঠি শুরা বাংলাদেশের পাশাপাশি পাঠানো হয়েছে সরকার ও উলামা কাউন্সিলের কাছে।
মালয়েশিয়া শূরার সতর্কবার্তায় বলা হয়, আয়োজকরা যদি নিজামুদ্দিনের প্রতিনিধিদের থেকে আমির ও ফয়সাল নির্বাচনের মূল্যবোধ ও ঐতিহ্য মানতে ব্যর্থ হন, তাহলে বাংলাদেশের বদলে মালয়েশিয়ায় বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের প্রস্তাব করা হবে।
বাংলাদেশ তাবলিগ জামাত সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া শূরার চিঠিতে জানানো হয়েছে- মওলানা মুহম্মদ সা’দের বর্তমান পদ-পদবি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সংশ্নিষ্টদের বৈঠক হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়া তাবলিগের শূরা সবাইকে জানাচ্ছে, মওলানা সা’দই হচ্ছেন তাবলিগ জামাতের বর্তমান আমির। যেভাবে অন্য সবাই মওলানা সা’দকে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও মূল্যায়ন করছেন, বাংলাদেশ সরকারও সেভাবেই মূল্যায়ন করবে। কারণ তিনি ও তার পূর্বসূরিরা নিজামুদ্দিন থেকে এসেছেন এবং তারা আল্লাহর ইচ্ছায় এর আগে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আল্লাহ নিজামুদ্দিনকেই তাবলিগ জামাতের কর্মকাণ্ডের পুনরুজ্জীবন দানের জন্মস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে তাবলিগ জামাতের মারকাজ হিসেবে পরিচিত দিল্লির নিজামুদ্দিন। ওই মারকাজের প্রধান মুরুব্বিদের একজন মওলানা সা’দ। তার কিছু বক্তব্যে বছরজুড়েই কওমিপন্থিরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে তাবলিগে ফয়সালের মধ্যে মওলানা মুহম্মদ জুবায়ের, মওলানা রবিউল হক, মওলানা ওমর ফারুক মওলানা সা’দের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
এই বিতর্কের জের ধরে মওলানা সা’দ এবারের বিশ্ব ইজতেমায় যোগ না দিলে এটি স্থানীয় ইজতেমায় পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, মওলানা সা’দ না এলে অন্য কোনো দেশের মুসল্লিরাও ইজতেমায় অংশ না নেওয়া শঙ্কা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।
পাঠকের মতামত